রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

ওয়াসা ৩৮০০ কোটি টাকার দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প যেন সংযোগ সড়ক ছাড়াই ব্রিজ

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা শহরে নিরবচ্ছিন্ন পানি ও পয়ঃসেবা নিশ্চিত করতে ঢাকা ওয়াসা ৩৮০০ কোটি টাকার দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প হাতে নেয়। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী এ কাজের উদ্বোধন করেন। তবে এই প্রকল্পে যা করা হয়েছে তা যেন দুই পাশের সংযোগ সড়ক ছাড়াই ব্রিজ। এমন ব্রিজ যেমন জনগণের কোনো কাজে আসে না, তেমনি এই প্রকল্পও জনগণের কোনো কাজে আসবে না, পাওয়া যাবে না এক পয়সার রাজস্বও।

গতকাল শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এমন অভিযোগ করে ঢাকা ওয়াসা কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। পরিষদের পক্ষে আহ্বায়ক মো. মোজাম্মেল হক এক লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে মো. মোজাম্মেল হক ছাড়াও ঢাকা ওয়াসার সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী অসীম কুমার ও মহিউদ্দিন আরিফ উপস্থিত ছিলেন। এসময় পরিষদের পক্ষে আহ্বায়ক মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ঢাকা শহরের গুলশান, বনানী, বারিধারা, বারিধারা ডিওএইচএস, বসুন্ধরা, বাড্ডা, ভাটারা, বনশ্রী, কুড়িল, সংসদ ভবন সংলগ্ন এলাকা, শুক্রাবাদ, ফার্মগেট, তেজগাঁও, আফতাবনগর, নিকেতন, সাতারকুল ও হাতিরঝিল এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় মানুষের সৃষ্ট পয়ঃবর্জ্য পরিশোধন করে বালু নদীতে নিষ্কাশিত হওয়ার মাধ্যমে পানি ও পরিবেশ দূষণ রোধ করাই ছিল এই প্রকল্পের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। ঢাকাবাসীর পয়ঃসেবা নিশ্চিত করার স্বার্থেই ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়।

এই প্রকল্পের দুটি অঙ্গ রয়েছে। প্রথম অঙ্গ হলো, উপরে উল্লিখিত এলাকাগুলোর ময়লা সংগ্রহ করে তা একত্রিত করার জন্য পাইপ লাইনের নেটওয়ার্ক তৈরি করা। দ্বিতীয় অঙ্গ হলো, এই সংগৃহীত ময়লা পরিশোধন করার জন্য ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি করা। এই ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ গত বছরের জুন মাসে সমাপ্ত হয়েছে। কিন্তু এই প্ল্যান্টটিতে যে ময়লা পরিশোধন করা হবে তা সংগ্রহ করার জন্য প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্ক তৈরির কাজের এখন পর্যন্ত কোনো খবর নেই। এ নিয়ে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যথাও নেই। এই প্রকল্পে যা করা হয়েছে তা যেন দুই পাশের সংযোগ সড়ক ছাড়াই ব্রিজ তৈরি করা, যা আমরা মাঝে মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখতে পাই। এমন ব্রিজ যেমন জনগণের কোনো কাজে আসবে না, তেমনি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও জনগণের কোনো কাজে আসবে না, পাওয়া যাবে না এক পয়সার রাজস্বও।

মোজাম্মেল হক বলেন, কোনো ঠিকাদারি কাজ শেষ হওয়ার পর ফাইনাল বিল দেওয়া হয়, কিন্তু ফাইনাল বিল নেওয়ার আগে ঠিকাদারকে অবশ্যই অবশ্যই কাজটি যে শতভাগ সফলভাবে শেষ হয়েছে তা বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিতে হয়। যদি পরীক্ষামূলক এই টেস্ট সফল হয় তবেই কেবল ঠিকাদারকে ফাইনাল বিল দেওয়া হয়। কিন্তু দাশেরকান্দি প্রকল্পের ক্ষেত্রে এসব পরীক্ষামূলক টেস্ট না করেই ফাইনাল বিল দেওয়া হয়েছে। এক বছরের ওয়ারেন্টি পিরিয়ডও ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে প্রকল্প চালাতে গিয়ে যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে ঠিকাদারের মাধ্যমে বিনা খরচে আর সমাধান করা যাবে না। এভাবে ঠিকাদারকে ফাইনাল বিল দিয়ে কার্যত ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারের স্বার্থই দেখেছে।

তিনি বলেন, সমাপ্ত হওয়া ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে কোনো ময়লা আসার ব্যবস্থা না থাকায় প্ল্যান্টটি প্রায় অলসভাবে পড়ে আছে। এভাবে পড়ে থাকলে একদিন প্ল্যান্টটি তার কার্যকারিতাই হারিয়ে ফেলবে। এখন ওয়াসার এই প্ল্যান্ট দিয়ে হাতিরঝিলের চারপাশে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের তৈরি করা ড্রেনেজ লাইনের ময়লা পানি পরিশোধন করে বালু নদীতে ফেলা হচ্ছে। হাতিরঝিলের চতুর্দিকে স্যুয়ারেজ লাইনগুলো অচল থাকায় মানুষের বর্জ্য বিভিন্ন উপায়ে হাতিরঝিলে পড়ে। এসব ময়লা পানি বেগুনবাড়ি খাল দিয়ে সেই বালু নদীতেই পড়ে। সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনের ময়লা পানি পরিষ্কার করা কোনোভাবেই এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দাশেরকান্দি প্রকল্পে তাই হচ্ছে। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যহীনভাবে জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকার এমন অপব্যবহার কোনোভাবেই কাম্য নয়।

পরিষদের আহ্বায়ক বলেন, যেকোনো ইঞ্জিনিয়ারিং কাজের ক্ষেত্রে প্লানিং এবং ডিজাইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক প্লানিং এবং ডিজাইন না করে দাশেরকান্দি প্রকল্পটির কাজ করায় এমন বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ময়লা সংগ্রহের নেটওয়ার্কের কাজ এবং ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ একইসঙ্গে শুরু হলে এই বিপর্যয় হতো না। জনগণও পয়ঃসেবা পেত এবং ঢাকা ওয়াসাও রাজস্ব পেত। পরিকল্পনাহীন এমন কাজের দায় সংস্থা প্রদান হিসেবে ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না, তাকেই এই দায়ভার নিতে হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ